চাকরীর ৭ বছরে ৭ জেলায় বদলী

জেলায় জেলায় ড্রাইভিং লাইসেন্সে ঘুষ বাণিজ্য, বহাল তবিয়তে বিআরটিএর মেহেদী

Passenger Voice    |    ০৫:২০ পিএম, ২০২২-০৯-০১


জেলায় জেলায় ড্রাইভিং লাইসেন্সে ঘুষ বাণিজ্য, বহাল তবিয়তে বিআরটিএর মেহেদী

সামসুদ্দীন চৌধুরী, নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট পদে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএতে যোগদান করে মেহেদী হাসান। এখনও মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে প্রমোশন হয়নি। তবে মোটরযান পরিদর্শক এর অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাগিয়ে বছর বছর বিভিন্ন সার্কেলে বদলী হয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ সেবা গ্রহীতারাও বিআরটিএর চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন ধরনের সুরাহা পায়নি। বিআরটিএর সদর কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও ঘুষ বাণিজ্যের ভাগভাটোয়ারা লেনদেন থাকায় তারাও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। 

২০১৪ সালে প্রথমে বিআরটিএর বগুড়া সার্কেলে কর্মরত ছিলেন এই মেহেদী, সেখান থেকে ঘুষ খাওয়ার হাতেখড়ি হয় মেহেদী হাসানের। এর কিছুদিন পরে বদলী হয় বিআরটিএর ফরিদপুর সার্কেলে। সেই পর্যন্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে ঘুষ বাণিজ্যের একটা মাত্রা ছিল। পরবর্তীতে মোটরযান পরিদর্শক (অঃ দাঃ) দায়িত্বে চাঁদপুর সার্কেলে বদলী হয় প্রায় এক মাসের মাথায়। শুরু হয় বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমানের সাথে অবৈধ ঘুষ লেনদেনের ভাগভাটোয়ারা। সেই সময় থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতি ও প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য শুরু করেন এইু মেহেদী হাসান। 

মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট পদে শীর্ষ ঘুষখোর হয়ে বেপরোয়া এই মেহেদী হাসান ২০১৯ সালে বিআরটিএর বাগেরহাট সার্কেলে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করতে করতে এক সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুদানে পরিচালিত বেকার যুবকদের দক্ষ চালনা শক্তি তৈরি করার প্রতিষ্ঠান বাগেরহাট টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এর ছাত্রদের কাছ থেকেও ঘুষ চেয়ে বসে । তবে এই বিষয়ে প্রতিবাদ করে বাগেরহাট টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ শেখ মনিরুজ্জামান বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও তৎকালীন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে স্পষ্ট ভাবে উল্লখ ছিল মোটরযান পরিদর্শক অঃ দাঃ মেহেদী হাসান ছাত্রদের কাছ থেকে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার কথা বলে ৩ হাজার টাকা করে জনপ্রতি ঘুষ দাবী করেছিলেন। এছাড়াও ঘুষ দিতে না চাইলে ছাত্রদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিতেন। এই অভিযোগটি বিআরটিএর আদালত-৫ এ তদন্ত হয়েছিল বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

২০১৯ সালের অক্টোবরের এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে বিআরটিএর বাগেরহাট সার্কেলের তৎসময়ের সহকারী পরিচালক বর্তমানে খুলনা সার্কেলে কর্মরত তানভীর আহম্মেদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন,  মোটরযান পরিদর্শক অঃ দাঃ মেহেদী হাসান এর বিরুদ্ধে সে সময় কিছু অনিয়ম নিয়ে বাগেরহাট টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও তৎকালীন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। পরবর্তীতে তদন্ত করে ছাত্রদের সাথে খারাপ আচরনের তথ্য পেয়েছিল। তবে তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টিও আলোচনায় ছিল। 

২০২০ সালে এই মেহেদী হাসান আবার বদলী হয়ে বাগেরহাট থেকে চাপাইনবাবগঞ্জ সার্কেলে যায়। সেখানেও প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য শুরু করেন তিনি। চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেষ্ট বোর্ডের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনকালে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর স্বাক্ষর জাল করে ও পূর্বানোমতি ছাড়া মোটা অংকের ঘুষ গ্রহন করে জরুরী ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা শুরু করেন। এছাড়াও ড্রাইভিং  লাইসেন্স ইস্যু করতে প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে জনপ্রতি ঘুষ আদায় করতেন। সে সময়ে তার অপকর্ম নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন চাপাইনবাবগঞ্জের পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন গুলো। 

মালিক-শ্রমিক সংগঠন গুলো এক সময়ে তার ঘুষ বাণিজ্যের উপর ক্ষীপ্ত হয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান সহযোগীতা চেয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। উক্ত অভিযোগর সতত্য নিশ্চিত হয়ে বিআরটিএর প্রশাসন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করেন। মামলাটি বর্তমানে বিআরটিএর আদালত-৬ এ বিচারাধীন। তবে কৌশলে এই মামলা থেকে বের হয়ে মোটরযান পরিদর্শক পদে বদলী নিতে বর্তমানে মরিয়া হয়ে আছেন তিনি। বিভাগীয় মামলা চলমান অবস্থায়ও মেহেদী হাসান তার চতুরতা দিয়ে বিআরটিএ চাপাইনবাবগঞ্জ সার্কেলে থেকে বিআরটিএর চুয়াডাঙ্গা সার্কেলে বদলী হয়ে যায়। সেখানেও চলে ঘুষ বাণিজ্যের লীলাখেলা। 

বিষয়টি জানতে বিআরটিএ চাপাইনবাবগঞ্জ সার্কেলের বর্তমান সহকারী পরিচালক শাহজামান হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমি যোগদানের আগে মেহেদী হাসান এই সার্কেল থেকে বদলী হয়ে যায়। তবে আমি লোকমূখে শুনেছি সাধারণ সেবা প্রার্থীদের সাথে তার আচরণ ভাল ছিল না। ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে তার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ ছিল সেটা আমি আসার আগে রাজশাহী বিভাগের পরিচালক আশফাকুর রহমান স্যার তদন্ত করেছিলেন।  

আগামী পর্বে থাকবে >>> মেহেদীর ক্ষমতার জোরঃ চুয়াডাঙ্গা থেকে শরিয়তপুর, ঘন ঘন বদলীর রঙ্গমঞ্চের অন্তরালে কারা।